আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। আজ সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
আজ সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচক ভাবে দেখি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সচিবালয়ে সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
মন্ত্রী বলেন, “মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার রিভিউ বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। রেজাল্ট কী আসে আমরা সেটা জানিয়ে দেব।… তারা কথা দিয়েছেন, ওই পর্যন্ত তারা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখবেন।”
বৈঠক শেষে হাসান আল মামুন জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কোটা সংস্কার করা হবে-এমন আশ্বাসে আপাতত আন্দোলন স্থগিত করছেন তাঁরা। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলেও তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীদের এই আহ্বায়ক।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন – দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন এবং উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের দলে ছিলেন হাসান আল মামুন, নিলয়, ফারুক, সোহেল, সন্ধান, উজ্জ্বল, তারেক, লিটন, ইমরান, নুর, ইলিয়াস, সুমন, সাথী, সাইদ, দীনা, আরজিনা, লুবণা, কানিজ, সুমন ও তিথি।
গতকাল রোববার বিকেল থেকে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী এই আন্দোলনে রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস আর জলকামানে আহত হয় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন।
এ ঘটনার জের ধরে আজ সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে কার্জন হলের সামনে আন্দোলনকারীরা ফের জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ১০-১৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয় ছাত্রদের দিকে।
এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি শাহবাগ মোড় প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে কার্জন হলের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সেখান থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে মিছিলটি পলাশীর মোড়ের দিকে যায়।
এরপর ভাষাশহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘরের সামনে দিয়ে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরে টিএসসি হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি আবার বুয়েটের দিকে যায়।
এদিকে টিএসসিতে দেখা যায়, আরো একদল ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য চত্বরে অবস্থান নিয়েছে।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে ‘কোটার সংস্কার চাই—বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত—বৃথা যেতে দেব না’।
বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
এই আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোববার রাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়ার কথাও কাদের বলেন।