কে বলবে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছেন, কে বলবে কদিন আগে রাজনৈতিক হুজ্জত সামলে এসেছেন? মাশরাফি আজ করলেন টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং। দিনে দিনে ধার বাড়ছে তাঁর। ফলাফল? রংপুরের বিপক্ষে ১৬.২ ওভারে ৬৩ রানেই অলআউট কুমিল্লা
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে পেলেই মাশরাফি বিন মুর্তজার কী যেন হয়! গত বিপিএলে লিগ পর্বে যে দুবার কুমিল্লার মুখোমুখি হলেন, দুবারই দুর্দান্ত মাশরাফিকে দেখা গেল। আজ কুমিল্লার বিপক্ষে তিনি শুধু উজ্জ্বল নয়, ভীষণ উজ্জ্বল। মাশরাফির অসাধারণ বোলিংয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল কুমিল্লার টপ অর্ডার।
২০১৫ বিপিএলে কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হয় মাশরাফির নেতৃত্বে। গত বিপিএল থেকে কুমিল্লার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুর রাইডার্সকে। লিগ পর্বে কুমিল্লার কাছে দুটি ম্যাচ হারলেও রংপুরের সেরা বোলার ছিলেন মাশরাফিই। শেষ পর্যন্ত রংপুর তো চ্যাম্পিয়নই হলো। আজও দলের সেরা বোলার হিসেবে আবির্ভূত হলেন রংপুর অধিনায়ক।
শিশিরভেজা রাত আর উইকেটের প্রথাগত চরিত্র—টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার কোনো মানে নেই। মাশরাফি ফিল্ডিং নিয়েছেন। প্রথম ওভারটাও করতে আসার ভার নিলেন কাঁধে। দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে প্রথম যে বলটা করলেন, তামিম মনে মনে ভাবতে পারেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফি ভাইকে ভাগ্যিস খেলতে হয় না! দ্বিতীয় বলে মেন্টাল গেমটা জিততে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ব্যাট চালিয়ে পরাস্ত হলেন। তামিম বুঝে গেলেন, বোলিংটা বড় ভাই-ই করছে।
ফলাফল তামিমের সতর্ক শুরু। এরপরও রক্ষা হলো না। মাশরাফির স্লোয়ার ঠিকঠাক পড়তে পারলেন না। মিড অনে তুলে মারতে গিয়ে ফরহাদ রেজার হাতে খেলেন ধরা! পরের ওভারে মাশরাফির অফ কাটারে উইকেট দিয়ে এলেন ইমরুল কায়েসও। মাশরাফিকে পেয়ে বসতে দেওয়া যাবে না, এ ভাবনায় এভিন লুইস লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে চাইলেন। কিন্তু রাতটা যে মাশরাফির। কুমিল্লার ক্যারিবীয় ওপেনার একেবারে সীমানার কাছে নাজমুল ইসলামের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন। ৩ ওভারে ১১ রানে দিয়ে মাশরাফি তুলে নিলেন ৩ উইকেট।
মাশরাফি নিজের শেষ ওভারটা আর জমিয়ে রাখেননি। করে গেলেন টানা ৪ ওভার। শেষ ওভারটাও দুর্দান্ত—পেলেন উইকেট মেডেন। আর সেই উইকেটটা কিনা কুমিল্লা অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের! প্রতিটা উইকেটই দামি। শুধু তা-ই নয়, মাশরাফির ৪ শিকারই প্রতিপক্ষের প্রথম চার ব্যাটসম্যান।
স্কিল আর মস্তিষ্কের সমন্বয় যখন শতভাগ সঠিক হবে, তখন সাফল্য অবধারিত। স্থানীয় তারকা তামিমই যখন মন্থর উইকেটে চালাতে পারেননি, অস্ট্রেলীয় তারকা স্মিথের ব্যাট চওড়া হবে কী করে? মাশরাফির স্লোয়ারটা পড়তে পারেননি স্মিথও। মিড অফে আলতো করে তুলে দিয়েছেন ফরহাদ রেজার হাতে। ৪ ওভার শেষে ১ মেডেন ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট—টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির সেরা বোলিং।
ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১৩ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ‘ম্যাশ’ একবারই ৪ উইকেট পেয়েছেন, ২০১২ সালের জুলাইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। বেলফাস্টে ১৯ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। আজ ছাড়িয়ে গেলেন সেটিকেও। সঙ্গে থাকল ১৮টি ডট বল, বলতে গেলে চার ওভারের তিনটাতেই তো রান দিলেন না! বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে একটি।
তাঁর পারফরম্যান্স দেখে কে বলবে চলে এসেছেন ক্যারিয়ারের শেষ দিকে, কে বলবে কদিন আগে সামলে এসেছেন নির্বাচনী হুজ্জত। ক্যারিয়ার সায়াহ্নেও মাশরাফি ফিরিয়ে আনছেন ঊষালগ্নের সেই দুরন্ত ফাস্ট বোলারকে, যিনি শুধু টগবগে আত্মবিশ্বাসে ছুটতেই জানেন! আজকের দিনের সেরা অবধারিতভাবেই তাই মাশরাফি।