ব্রহ্মপুত্র, ধরল ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারনে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে সংকটময় করে তুলেছে।
এতে জেলার ১৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা। পাশাপাশি পানিবাহিত রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
সোমবার সকালে চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার মাত্র ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও ত্রাণ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানান, বন্যায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসারকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে জানিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়াসহ সরকারি-বেসরকারি সকল বিভাগকে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম বাঁধ সংস্কারের কর্ম-পরিকল্পনা ও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কাজ শুরু করেছে।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে জেলায় ৮৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে জানিয়ে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, সকাল ছয়টার দিকে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে রবিউল ইসলামের সাড়ে তিন বছরের ছেলে নাজিম, নাজিমের মা নাজমা বেগম (২২), রবিউলের বোনের স্বামী মোজাম্মেল হক (৪৫) ও মোজাম্মেলের সাত বছরের ছেলে আলী হোসেন বন্যার পানি পার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সবাই পানিতে তলিয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর শিশু নাজিমের লাশ ভেসে ওঠে। বাকিরা নিখোঁজ রয়েছে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে লালমনিরহাট বুড়িমারী রুটের ভোটমারী থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত, কুড়িগ্রামের রমনা বাজার থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত, ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় রুট, লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে তিস্তা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।