আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুনদের মন্ত্রী বানিয়েছি এর মানে এই নয় যে পুরোনোরা ব্যর্থ ছিলেন। পুরোনোরা সফল ছিলেন বলেই দেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। নতুনদের বানিয়েছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার জন্য।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে নবনির্বাচিত মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় নবনির্বাচিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন মন্ত্রীদের সব কাজ বুঝে এরপর করতে হবে এবং পুরোনোদের সফলতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমি কঠোর নজরদারিতে রাখব। কে কী করেন, আমি তা দেখতে চাই। সবাইকে বলব, আগে জানতে হবে, বুঝতে হবে। তারপর কাজ করতে হবে এবং কথা বলতে হবে। কারণ, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করে রেখে যেতে চাই।’
নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচন করে তৃতীয় দফা সরকার গঠন করলাম, টানা ১০ বছর একসঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন তাঁদের জায়গায় নতুনদের আনার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে যেসব জেলায় কখনো মন্ত্রী হননি, সেসব এলাকায় মন্ত্রী করার চেষ্টা করেছি। স্বাভাবিকভাবে মানুষ ধারণা করে এলাকায় মন্ত্রী দিলে সে এলাকার উন্নয়ন হয়। যদিও আমরা সমানভাবে সারা দেশে উন্নয়ন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তরুণ ভোটার ও নারীদের প্রচুর সমর্থন পেয়েছি। আমরা যখন সার্ভে করেছি, তখন দেখেছি তরুণ ভোটার ও নারীদের ভোটের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে। তখন আমরা ভেবেছি তাদের কীভাবে আকর্ষণ করা যায়? কী কাজ করলে তারা ভোট দেবে, সে চিন্তা থেকেই আমরা এভাবে মন্ত্রিসভা সাজিয়েছি। নির্বাচন যদি অঙ্কের মতো করে করা যায়, তাহলে হারজিতের বিষয়টা বোঝা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আবার সেই যুদ্ধাপরাধী, অগ্নি–সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় আসবে কি না, তা সিদ্ধান্তের বিষয় ছিল। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় আমি যেটা দেখেছি তা হলো, সব শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে নৌকার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ, নৌকার গণজোয়ার। শিডিউল ছাড়াও আমি জনসভা করেছি। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে যে বক্তব্য শুনেছি, তা হলো নৌকার প্রতি আগ্রহ। তারা চেয়েছে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসুক।’
বিএনপি মনোনয়ন–বাণিজ্যই করেনি, অকশনে দিয়েছিল
বিএনপির পরাজয়ের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব আসনে বিএনপি জিতবে, সেসব আসনে তারা মনোনয়ন দেয়নি। বহু আসন ছিল যেখানে যোগ্য লোক ছিলেন, তাঁকে মনোনয়নই দেওয়া হয়নি। তারা টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দিয়ে যোগ্য লোকটাকে সরিয়ে দিয়েছে। শুনেছি মালয়েশিয়া থাকে, এমন দুজন লোক এসে টাকা দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে নিয়েছে। নিজের দোষেই তারা হেরেছে। অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা মনোনয়ন–বাণিজ্য শুধু করেনি, মনোনয়ন তারা অকশনে দিয়েছিল।’
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এদের আর রাজনীতিতে ঠাঁই হওয়া উচিত না। এদের আর ক্ষমতায় আসা উচিত না। এরা ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে, মানুষের ক্ষতি করে। এবার জনগণ এটা বুঝতে পেরেছে বলেই জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে যে পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে, আগুন–সন্ত্রাস হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, এরপর আর সাধারণ মানুষ কীভাবে তাদের ভোট দেবে? তাই মানুষ বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ তাদের বিশ্বাস করেনি। মানুষের মধ্যে আরেকটা শঙ্কা ছিল, তারা বিজয়ী হলে কে হবে তাদের প্রধানমন্ত্রী? আবার একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে করা হলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এসব নিয়ে তাদের ভোটাররা শঙ্কায় ছিল। যাক তারা ক্ষমতায় আসেনি। ক্ষমতায় এলে তারা গণহত্যা শুরু করে দিত। সে জায়গা থেকে মানুষ মুক্তি পেয়েছে। কারণ, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা কী পরিমাণ ধর্ষণ করেছিল, তার হিসাব নেই। এবার এলে তা-ই করত।