Home বাংলাদেশ বাঙালির অবিস্মরণীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আজ।

বাঙালির অবিস্মরণীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আজ।

2222
0
SHARE
আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি হচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
বাঙালির শৌর্য-বীর্য এবং বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর আজ। শত বছরের শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খলা ভেঙে লাল-সবুজের বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন আজ।

১৬ ডিসেম্বর, আজ জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হবার, জয় বাংলা বলে আরেকবার বলিয়ান হওয়ার দিন। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যারা পরাধীনতার গ্লানি মোচন করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন- সেইসব বীর সন্তান, লাখো শহীদদের স্মরণ করবার দিন, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিন। বাঙালি বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করার দিন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
আজ থেকে ৪৬ বছর আগের এই কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের দিনে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী সম্মুখসমরে পরাজিত হয়ে হেঁট মস্তকে দাঁড়িয়ে ছিল বীর বাঙালির কাছে। আজ চিরগৌরবের মহান বিজয় দিবস। আজ লাল সবুজের উৎসবের দিন।
যেসব অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী দীর্ঘ নয়মাস ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়েছে, সেসব অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে ব্যর্থতা ও অপমানের গ্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় তারা। সেই থেকে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে প্রতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর।
আজ কৃতজ্ঞ জাতি গভীর বেদনা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য যে বীর সন্তানেরা আত্মদান করেছেন, যাঁরা জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের।

মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

দিনের প্রথম প্রহরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে জনতার। বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি লাখো শহীদের প্রতি নিবেদন করবে অর্ঘ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সরকারি ভবন জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো।জধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানাগুলোতে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।

এবার ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ায় এবারের বিজয় দিবসের উৎসব ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
“১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
কর্মসূচি: প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকাল তিনটায় বিজয় শোভা যাত্রা সহকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় র‌্যালী শুরু হবে।

এছাড়া, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।