মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন-প্রক্রিয়া চালানো এবং প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয় নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার পরিপেক্ষিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ব্রিটেন এবং সুইডেনের অনুরোধে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এই প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থক চীনের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা – তা দেখার বিষয়। ইতেপূর্বে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনার পর বিবৃতি প্রকাশে বাধা দিয়েছেন চীন। গত ৩০ আগস্টও নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত মেথিউ বলেছেন, ‘আমি মনে করি আলোচনাটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও তার ফলাফল কোনো না কোনো পন্থায় সবার কাছে প্রকাশ করা হবে। এটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্বেগের একটি লক্ষণ। বার্মার রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে এবং অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।’
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার গত সোমবার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুরতার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার একটি পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা ‘মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনতে পারে বলে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গত শুক্রবার অনানুষ্ঠানিকভাবে রাখাইনের সহিংসতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কূটনীতিকদের অবহিত করেন । তবে এই বৈঠকেও চীন ও রাশিয়া কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। তবে নিরাপত্তা পরিষদের যে কোনো প্রস্তাব রুখতে চীন ও রাশিয়ার ওপর ভরসা করছে বলে মিয়ানমার জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে অভ্যন্তরে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার যে প্রস্তাবের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছে, তার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু ভেটো ক্ষমতার অধিকারী চীন ও রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো প্রস্তাব রুখে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইবে। এ লক্ষ্যে নিন্দা প্রস্তাবও আনা যেতে পারে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে পাস হওয়া প্রস্তাবের নৈতিক প্রভাব থাকলেও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।