‘শুয়া চান পাখি আমার
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি
তুমি আমি জনম ভরা ছিলাম মাখামাখি
আজি কেন হইলে নীরব মেল দুটি আঁখি রে পাখি
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’
এভাবে আর কখনো বারী সিদ্দিকীকে গাইতে দেখা যাবে না।
নিজের গাওয়া এই গানের মতই চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার, গীতিকার, বংশীবাদক ও সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গত ১৭ নভেম্বর রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে তাকে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে লাইফ সাপোর্টেও রাখা হয়েছিল বেশ কিছুদিন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার দুটি কিডনি অকার্যকর ছিল। তিনি বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারেই গান শেখায় হাতেখড়ি হয় তার। ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে দেখে তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরে ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।
প্রথমে একজন বংশীবাদক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তবে দীর্ঘদিন সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে।
ওই বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে তিনি ছয়টি গান গেয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসেন।
তার জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।
সকালে মরদেহ নেত্রকোনায় শিল্পীর নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাব্বির সিদ্দিকী। এর আগে বিটিভি ভবনে জানাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী।